গাভী পালনে সফল
জেসমিন আক্তার
গাজীপুর জেলার বরমী গ্রামের জেসমিন আক্তার একজন অতি দরিদ্র নারী। ২০০৮ সালে দিন মুজর নাসির উদ্দিন এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের পর শুরু হয় জীবন যুদ্ধ, স্বামীর সল্প আয়ে সংসার চলে না নুন আনতে পানতা পুরাই।বছর যেতে না যেতেই এরই মাঝে জন্ম গ্রহণ করে একটি মেয়ে সন্তান। সংসারে ব্যায় আরও প্রসারিত হয়। তার স্বামী নাসির উদ্দিন দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা আয় করে। সংসারে অভাব অনটন দিন দিন বেড়ে যায়।সংসার চালাতে গিয়ে পাড়া প্রতিবেশীর কাছে ধার দেনা করে ফেলে।এত অভাব অনটনের মধ্যে যখন আর দিন চলে না তখন সে স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে নিজে কোন কাজ করার চিন্তা করে ,কিন্তু পুঁজির অভাবে তা সম্ভব হয় না। তখন এক প্রতিবেশীর কাছে জানতে পারে গ্রামীণ মানবিক উন্নয়ন সংস্থা(গ্রামাউস) সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে থাকে। প্রথমে গ্রামাউস এর ফিল্ড আফিসার পরবর্তীতে ম্যানেজার স্যার সাথে কথা বলে ঋণ গ্রহণ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় জানার পর ২০১৬ সালে সংস্থার ৯৪ নং বরমী জাগরণ মহিলা সমিতিতে উক্ত সমিতির সভানেত্রীর সুপারিশে ১ম দফায় ৫০,০০০/- (পঁঞ্চাশ হাজার) টাকা ঋণ নিয়ে চাচাত ভাইয়ের সাথে শেয়ারে গরুর ব্যবসা শুরু করে । আর কিছু টাকা দিয়ে কিছু হাঁস মুরগী ক্রয় করে বাড়িতে পালন করার জন্য।আল্লাহর রহমতে পরে আর পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি, গরু এক বাজারে ক্রয় করে অন্য বাজারে ব্রিক্রি করে ভাল টাকা লাভ করে পাশাপাশি হাঁস-মুরগীর ডিম ব্রিক্রি করে এমন করে ১ম দফা ঋণ পরিশোধ করে ২য় দফায় ৭০,০০০ (সত্তর হাজার )টাকা ঋণ নিয়ে একটি দুধের গাভী ক্রয় করে । স্বামী ব্যবসা করে জেসমিন বাড়ীতে গাভীপালন করে দুধ ব্রিক্রি করে ২য় দফা ঋণ পরিশোধ করে ৩য় দফায় ১২০০০০/-এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে আরও একটি গাভী ক্রয় করে পাশাপাশি ব্যবসার পুঁজি বৃদ্ধি করে। মেয়েরা পড়াশোনার পাশাপাশি মাকে সাহায্য করে বড় মেয়ে এবছর এস.এস. সি.পরীক্ষা দিবে । তাদের স্বপ্ন ছিল থাকার একটি সুন্দর ঘর দেয়া।স্বপ্ন পুরণের আশায় ৪র্থ দফায় ১,৭০,০০০ /- (এক লক্ষ সত্তর হাজার) টাকা ঋণ নিয়ে নিজের জমানো টাকা দিয়ে ৪রুম বিশিষ্ট ১টি হাফ বিল্ডিং ঘর তৈয়রী করে।স্বামী ও নিজে আয় করতে পেরে খুবই খুশি।ঋণ পরিশোধেও জেসমিন আক্তার আতœবিশ্বাসী। জেসমিন আরো বেশী ঋণ নেয়ার যোগ্যতা থাকলেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঋণ গ্রণন করে না তাই সর্বশেষ ৫ম দফায় ৩০০,০০০/- (তিন লক্ষ ) টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ির পাশে ৫০ শতক জমি বন্ধক রাখে। জেসমিন সংসারের কাজের পাশাপাশি গরুর খাবার দেওয়া,দুধ দোহানো ,মুরগী পালন করে ০৩টি গাভী পালনে স্বামীকে সাহায্য করে।সংস্থা থেকে সে গাভী পালনের উপর প্রশিক্ষণ পেয়েছে, তাই গাভীর অসুস্থতায় নিজে প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পারে।স্বামী ব্যবসার পাশাপাশি বাড়ীর পাশের জমি টুকু চাষ করে। স্বামী স্ত্রী ২ জনের আয়ে সংসারে যাবতীয় খরচ চালিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধের পরও ১৫-২০ হাজার টাকা প্রতি মাসে আয় থাকে। গ্রামাউস এ তার সঞ্চয় জমা রয়েছে ৬৪০০০/- টাকা। জেসমিন আক্তার এর স্বপ্ন মেয়ে ০৩টি কে পড়াশুনা করিয়ে শিক্ষিত করে স্বাবলম্বী হিসাবে গড়ে তোলা।সমিতিতে স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা সর্ম্পকে জেনে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও সাবমারসিবল মটার বসিয়েছে। এক সময় তাদের ছোট একটি ঘর ছাড়া কিছুই ছিলনা।এখন নিজেদের থাকার জন্য ০১টি হাফবিল্ডিং ঘর,০৪টি গাভী, গাভী থাকার জন্য ০১ টি টিনের চাপড়া ও মাঠে ৩০ শতাংশ জমি বন্ধক রাখা আছে। বর্তমানে জেসমিন আক্তার স্বনির্ভর।তার কোন দেনা নেই। জেসমিন আক্তার এখন আনেক সুখে আছে।